আলফানসো আম গাছ চেনার উপায় নিয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। ভারতে উৎপন্ন হওয়া সবচেয়ে উন্নত জাতের উৎকৃষ্ট মানের আম হলো ‘আলফানসো’। আমের রাজা আলফানসো। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই আম উৎপাদিত হচ্ছে। স্বাদে-গন্ধে ভরপুর এই আমের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তাই বলা হয় ফলের রাজা আম, আর আমের রাজা হলো আলফানসো।
আলফানসো অর্থ কি
আলফানসো আম (যা ‘কাকডি হাপুস’ নামেও পরিচিত অর্থ হচ্ছে কাগজের মতো পাতলা খোসা।) উপমহাদেশের সবচেয়ে দামি আম।
পর্তুগীজ এক সামরিক বিশেষজ্ঞেরআলফানসু ডি আলবাকারকির নামানুসারে এই আমের নাম রাখা হয়। কারণ ভারতবর্ষে প্রথম পর্তুগিজরাই আমের চারা থেকে কলম করার পদ্ধতি জনপ্রিয় করে তোলে। ভারতের জাতীয় ফল আম আর বাংলাদেশের জাতীয় গাছ হল আম গাছ।
মোটামুটি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে জুনের শেষ পর্যন্ত আলফানসো আম পাওয়া যায়। এই জাতের আম আকৃতিতে মাঝারি গোলাকার ও ডিম্বাকার হয়ে থাকে। পরিপক্ক আলফানসো আমের ভেতরে ও বাইরে উভয় দিকই কমলা-হলুদ বর্ণের এক মিশ্র রঙে রঞ্জিত। অত্যন্ত মিষ্টি ও সুস্বাদু এই আম আঁশবিহীন এবং এর শাঁস মাখনের মত কোমল। এছাড়া এই আমের আরেকটি মূল বৈশিষ্ট্য এর মন মাতানো সুগন্ধ। একটি পাকা আলফানসো আম এক-দুই মিনিট হাতে ধরে রাখলেও আপনার হাত থেকেও এর সুগন্ধ পাবেন । অতুলনীয় স্বাদ ও সুগন্ধের কারণেই আলফানসো কে বলা হয় আমের রাজা।
উপমহাদেশের সবচেয়ে দামি আম হিসেবে পরিচিত এই আলফানসো। কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লী, বেঙ্গালুরুসহ ভারতের বড় শহরগুলোতে উন্নতমানের হিমসাগর, ল্যাংড়া আমের দাম যেখানে কেজি প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে সেখানে কেবল একটি আলফানসো আমের মূল্য কমপক্ষে ১০০ টাকা।
আলফানসো আম গাছ চেনার উপায়
আলফানসো প্রজাতির আম মূলত দুটি বিভিন্ন জাতের আমের চারা কলম থেকে উৎপন্ন করা হয়েছে। ভারতের অঙ্গরাজ্য গোয়াতে আলফানসোর জন্ম হলেও, বর্তমানে মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে সবচেয়ে উন্নত জাতের আলফানসো উৎপাদিত হচ্ছে। এছাড়া মহারাষ্ট্রের পুনে, গুজরাটের বলসাদ, কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরু, উড়িষ্যার দেবগড় এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা ও মুর্শিদাবাদে বাণিজ্যিকভাবে উন্নত জাতের আলফানসো চাষ করা হয়ে থাকে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গনাতেও এই আম ফলে।বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও,রাজশাহী ইত্যাদি জেলায় উন্নত জাতের আলফানসো চাষ করা হচ্ছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে সহজে আলফানসো আম গাছ ও আম চেনা যাবে। এছাড়া গুগলে সার্চ করেও আমের নমুনা দেখে নিতে পারেন।
ভারতে উৎপাদিত বেশিরভাগ আলফানসো আমই বিদেশে রপ্তানির করা হয়। ১৯৮৯ সালে আলফানসো আমের সাথে কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতিকর পোকামাকড় আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা জন্য আমেরিকা সরকার আলফানসো আম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অবশ্য পরবর্তীতে ভারতীয় আম উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যবস্থায় অদৃষ্টপূর্ব উন্নতি হওয়ায় ২০০৭ সালে আমেরিকা আলফানসো আমদানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু ভারতের আম রপ্তানি প্রক্রিয়া আরো কয়েক ধাপ উন্নত হওয়ায় ২০১৫ সালে এই নিষেধাজ্ঞাও বাতিল করা হয়।
স্বাদ ও সুগন্ধ ছাড়াও আলফানসো আমে রাতকানা ও অন্ধত্ব রোগ প্রতিরোধে আলফানসোর চমৎকার ঔষধি গুন প্রমাণিত হয়েছে। আলফানসো গাছের কচি পাতার রস দাঁতের ব্যাথা উপশম করতে সাহায্য করে। এছাড়া আলফানসোর শুকনো মুকুল মূত্রনালির জ্বালা, আমাশয় প্রভৃতি রোগ নিরাময় করে।